Header ads

উদাহরণসহ সাহিত্যের বিভিন্ন প্রকার ভাব ও রস এর নাম লিখ | Feelings and sentiments of literature

উদাহরণসহ সাহিত্যের বিভিন্ন প্রকার ভাব ও রস এর নাম লিখ | Feelings and sentiments of literature

সাহিত্যের বিভিন্ন প্রকার ভাব ও রস

ভাব ও রসঃ

কাব্য পাঠের মাধ্যমে মনে যে অভিব্যক্তি জন্ম নেয়, তাকে ভাব বলে।  ভাব হলো মনের বিশেষ অবস্থা। তবে কেবল কাব্য পাঠে এই ভাব জন্ম নেয়, তা নয়। আধুনিক সাহিত্য শুধু কাব্য নির্ভর নয়। উপন্যাস, গল্প, নাটক, এমনকি প্রবন্ধ পাঠেও ভাবের অবতারণা ঘটতে পারে। চলচ্চিত্র, নাটক ইত্যাদি দর্শনেও ভাব তৈরি হয়। বৃহৎ অর্থে, সাহিত্যের সব ধরনের আঙ্গিককে কাব্য বলা যায়। আর সাহিত্যর সব আঙ্গিকেই ভাব তৈরি হয়।  

অলংকার শাস্ত্রে মানব মনের চিত্তবৃত্তিকে বোঝানো হয়। মানুষের মনের চিত্তবৃত্তি সবসময় একরকম থাকে না। বিভিন্ন রকম কাব্য পাঠে বিভিন্ন রকম ভাবের জন্ম হয়। এমনকি, একটি কাব্য পাঠে একাধিক ভাবের জন্ম হয়। অর্থ্যাৎ, ভাব স্থায়ী অনুভূতি নয়। এর আবির্ভাব ও অন্তর্ধান ঘটতে পারে। অতুলচন্দ্র গুপ্ত ‘কাব্য জিজ্ঞাস’ গ্রন্থে ভাব বোঝাতে ‘চিত্তবৃত্তি’ ও ‘ইমোশন’ শব্দ দুটি ব্যবহার করেছেন। সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা রকম ভাব এমনিতেই তৈরি হয়। কিন্তু অলংকার শাস্ত্রে ভাব বলতে দৈনন্দিন জীবনে তৈরি হওয়া অনুভূতিকে বোঝায় না। এখানে, ভাবের সঙ্গে কাব্যের সম্পর্ক্য আছে। অর্থ্যাৎ, কাব্য পাঠে যে অনুভূতি ও অনুভবের জন্ম হয়, তাকে ভাব বলে। ভাবের ব্যাপারটি মানসিক। 

কাব বা লেখকের প্রচেষ্টা থাকে পাঠকের মনে আনন্দ-বেদনা বা অন্য কোনো ভাব তৈরি করা । এজন্য তিনি কবিতায় বা লেখায় সচেতনভাবে িএমন কিছু উপাদানের সন্নিবেশ করেন, যাতে পাঠক মনে ভাব তৈরি হয়। এসব উপাদানের সারবস্তুকে রস বলে। ভাব লৌকিক; কিন্তু রস অলৌকিক। রসের জগৎ পুরোপুরি মায়ার জগৎ বা কাব্যের জগৎ। যেমন, কাব্যে করুণ রস থাকতে পারে। এই করুণ রসের ফলে মনে শোকভা জন্ম নেয়। এই শোক বাহ্য উপাদান। কিংবা কাব্যে হাস্য রস থাকতে পারে। এই হাস্য রসের কারণে মনে হাস ভাব জন্ম নেয়। এই হাসি বাহ্য উপাদান। কবির প্রচেষ্টা থাকে কাব্যে বিভিন্ন রকম রস তৈরি করা।  এই অলৌকিক রস থেকে লৌকিক ভাবের জন্ম হয়। 

রসের শ্রেণিবিভাগঃ

মানব মনে নয় ধরনের স্থায়ী ভাব তৈরি হয়। এই নয় ধরনের ভাব তৈরি হওয়ার পেছনে নয় ধরনের কাব্য রসের ভূমিকা রয়েছে। নিচে রস ও ভাবকে পাশাপাশি দেখানো হলো: 

(১) প্রেয়ো রস থেকে জন্ম নেয় প্রীতি ভাব বা রতি ভাব

(২) করুণ রস থেকে জন্ম নেয় শোক ভাব

(৩) হাস্য রস থেকে জন্ম নেয় হাস ভাব

(৪) রুদ্র রস থেকে জন্ম নেয় ক্রোধ ভাব

(৫) বীর রস থেকে জন্ম নেয় উৎসাহ ভাব

(৬) ভয়ানক রস থেকে জন্ম নেয় ভয় ভাব

(৭) বীভৎস রস থেকে জন্ম নেয় জুগুপ্সা ভাব

(৮) অদ্ভুত রস থেকে জন্ম নেয় বিস্ময় ভাব

(৯) শান্ত রস থেকে জন্ম নেয় শম ভাব 

নিচে উদাহরণসহ বিভিন্ন প্রকার রস আলোচনা করা হলো-

১। প্রেয়োরস → প্রীতিভাব 

মানব মনের প্রেম-প্রীতি, স্নেহ-মায়া ইত্যাদি স্থায়ী ভাক থেকে প্রেয়োরস তৈরি হয়। এই রসের স্থায়ী ভাব রতি বা প্রীতি। মানুষ বিভিন্ন জাগতিক কারণে প্রেমে পড়ে; বিভিন্ন সময়ে  মানুষের মধ্যে মিলনের আকাঙ্খা তৈরি হয়। কিন্তু সাহিত্য বা কাব্য পাঠে যখন প্রীতি বা রতির ভাব তৈরি হয়, তখন বলা হয়, ওই সাহিত্যে বা কাব্যে প্রেয়োরস বিদ্যমান। 

প্রেয়োরস ছয় ধরণের: 

ক. সাধারণ প্রেয়োরস: সাধারণ প্রেম, যেমন - ভ্রাতৃত্ববোধ, সমাজপ্রেম, মানবপ্রেম ইত্যাদি সাধারণ প্রেয়োরসের উপাদান। 
যেমন- 
        শুন হে মানুষ ভাই 
        সবার উপরে মানুষ সত্য
        তাহার উপরে নাই। (চন্ডীদাস)

খ. মধুর রস: মধুর রসের আরেক নাম শৃঙ্গার রস বা আদি রস। নারী-পুরুষের মধ্যে মিলনের আকাঙ্খা তৈরি হয় শৃঙ্গার রসের কারণে। শ্রীকৃষ্ণকীর্তনে  রাধা-কৃষ্ণের মিলনের বর্ণনা আছে; সেখানে এই রসের নাম শৃঙ্গার রস। আবার, বৈষ্ণব পদাবলিতে রাধা-কৃষ্ণের মিলনের প্রসঙ্গে একে মধুর রস বলা হয়েছে। সাধারণভাবে প্রেমের কাব্যে শৃঙ্গার রস বিদ্যমান থাকে। যেমন -
        
        তোমারেই যেন ভালোবাসিয়াছি শত রূপে শতবার
        জনমে জনমে যুগে যুগে অনিবার।   (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)

গ. বাৎসল্য রস: বৎস্ বা সন্তানের প্রতি মায়ের প্রেম তৈরি হয় যে রসের কারণে তাকে বাৎসল্য রস বলে। যেমন- শ্রীকৃষ্ণের ছেলেবেলার কোনো ঘটনা পড়ে বা শুনে কারো মধ্যে মাতৃত্ব  ভাব তৈরি হতে পারে। এক্ষত্রে বলতে হবে, ওই কাব্যে বাৎসল্য রস আছে। যেমন - 
        
        একরত্তি সোহাগ-ভরা একরত্তি খুকু,
        একরত্তি রামধনুকে আকাশ ডুগুডুগু।
        এরে আমি কোথায় রাখি, একরত্তি জল,
        দুর্ব্বাশীষে সোয়ার হয়ে জগৎ ঝলমল! (জসীমউদ্দীন)

ঘ. ভক্তি রস: বাৎসল্য রস ছোটোর প্রতি বড়োর প্রেম। এর ঠিক বিপরীত রসকে ভক্তি রস বলে। এক্ষেত্রে গুরুজন বা বড়ো কারও প্রতি ছোটোর ভক্তি ফুটে ওঠে। প্রভু বা পরম দেবতার প্রতি কারও আত্মনিবেদনও ভক্তিরসের মধ্যে পড়ে। যেমন -
        
        বিভো, দেহ হৃদে বল
        না জানি ভকতি, না জানি স্তুতি
        কি দিয়া করিব, তোমারি আরতি
        আমি নিঃসম্বল!
        তোমার দুয়ারে আজি রিক্ত করে
        দাঁড়ায়েছি প্রভু, সঁপিতে আমারে
        শুধু আখি জল,
        দেহ হৃদে বল! (কায়কোবাদ)

ঙ. সখ্য রস: সখা বা সখীর জন্য যে প্রীতি ভাব, সেখান থেকে সখ্য রসের জন্ম। যেমন -
        
        আমার বাড়ি যাইও ভোমর
        বসতে দেব পিঁড়ে
        জলপান যে করতে দেব
        শালি ধানের চিঁড়ে।
        শালি ধানের চিঁড়ে দেব,
        বিন্নি ধানের খই,
        বাড়ির গাছের সবরী কলা,
        গামছা বাঁধা দই। (জসীমউদ্দীন)

চ. দেশপ্রীতি রস: জন্মভূমি বা স্বদেশের প্রতি ভালোবাসার নাম দেশপ্রীতি । এক উদ্দীপ্তি ও স্বাধীনতাবোধও বলা যায়। এই বোধ বা ভাব থেকে তৈরি হওয়া রসকে দেশপ্রীতি রস বলে । যেমন -
        এ কি অপরূপ রূপে মা তোমায় হেরিনু পল্লি-জননী
        ধানে ও ফসলে কাঁদা মাটি জলে ঝলমল করে লাবণী। (কাজী নজরুল ইসলাম)
       

২। করুণ রস → শোকভাব

(ক)   যেদিন আমি হারিয়ে যাবো, বুঝবে সেদিন বুঝবে
        অস্তপারের সন্ধ্যাতারায় আমার খবর পুঁছবে
        বুঝবে সেদিন বুঝবে।”

(খ)     সেদিন হতে কেন মা আর দিদিরে না ডাকো;
           দিদির কথায় আঁচল দিয়ে মুখটি কেন ঢাকো?
         খাবার খেতে আসি যখন
         দিদি বলে ডাকি তখন,
        ও-ঘর থেকে কেন মা আর দিদি আসে নাকো?
        আমি ডাকিতুমি কেন চুপটি করে থাকো?

৩। হাস্যরস → হাস্যভাব :

(ক)    ঠাস্‌ ঠাস্‌ দ্রুম্‌ দ্রাম্‌, শুনে লাগে খট্‌কা-
           ফুল ফোটে? তাই বল! আমি ভাবি পট্‌কা !

(খ)   বাবুদের তাল-পুকুরে
        হাবুদের ডাল-কুকুরে
        সে কি বাস করলে তাড়া,
        বলি থাম একটু দাড়া।

৪। রুদ্ররস → ক্রোধভাব:

(ক)  আমি   দুর্বার,

        আমি   ভেঙে করি সব চুরমার!
        আমি   অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খল,
        আমি   দ’লে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃঙ্খল!

(খ)    কোথা চেঙ্গিস্‌, গজনী-মামুদ, কোথায় কালাপাহাড়?
        ভেঙে ফেল ঐ ভজনালয়ের যত তালা-দেওয়া-দ্বার!
        খোদার ঘরে কে কপাট লাগায়, কে দেয় সেখানে তালা?
        সব দ্বার এর খোলা রবে, চালা হাতুড়ি শাবল চালা!

৫। বীররস → উৎসাহভাব

(ক)     তীর হারা এই ঢেউয়ের সাগর

        পাড়ি দেবো রে।
        আমরা ক'জন নবীন মাঝি
        হাল ধরেছি,
        শক্ত হাতে রে।

(খ)  গাজনের বাজনা বাজা!

        কে মালিক? কে সে রাজা?
        কে দেয় সাজা
        মুক্ত স্বাধীন সত্যকে রে?
        হা হা হা পায় যে হাসি,
        ভগবান পরবে ফাঁসি!
        সর্বনাশী
        শিখায় এ হীন তথ্য কে রে!

৬। ভয়ানকরস → ভয়ভাব

(ক)  সামনে রয়েছে দূরের যাত্রা
        বিভীষিকাময় রাত্রি,
        রয়েছে শাপদ
        অরণ্যঘণ দূর্বল অভিযাত্রী ।

(খ)    দুয়ারে সাপের গর্জন শোনো নাকি ?
        কত অসংখ্য ক্ষুদধিতের সেথা ভির,
        হে মাঝি ! তোমার বেসাতি ছড়াও, শোনো,
        নইলে যে-সব ভেঙে হবে চৌচির । 

৭। বীভৎসরস → জুগুপ্সাভাব:

(ক)    বড় কষ্ট হয়
এ সভ্যতা দেখে ,
দুর্নীতি আর ভেজাল
ভাইরাস হয়ে মিশে গেছে
সভ্যতার প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে,
চুরি রাহাজানি সম্পত্তি দখল
অলিত গলিতে ছিনতাই ধর্ষন
মদের নেশায় মাতাল যুব সমাজ,
এটাই কি আমাদের সমাজ
আধুনিক সভ্যতায় ভরা?

(খ) এ চোখে ঘুম আসে না। সারারাত আমার ঘুম আসে না-
তন্দ্রার ভেতরে আমি শুনি ধর্ষিতার করুণ চিৎকার,
নদীতে পানার মতো ভেসে থাকা মানুষের পচা লাশ,
মুন্ডহীন বালিকার কুকুরে খাওয়া বিভৎস শরীর
ভেসে ওঠে চোখের ভেতরে। আমি ঘুমুতে পারিনা, আমি
ঘুমোতে পারিনা-

৮। অদ্ভুতরস → বিস্ময়ভাব:

(ক)  বাঁশ বাগানের মাথার ওপর
        চাঁদ ওঠেনা আর
        চাঁদ ওঠেছে ছাদের ওপর
        দেখছি তা বার বার;

       দুধ মাখা ভাত কাকে খায়নি
     খেয়ে গেছে চাঁদ,
     দুধের মতো সাদা চাঁদুধ
     ভরে গেছে ছাদ 

(খ) কেউ একজন বলতো,
        মেঘ চচ্চরি করে দিবে
        খাওয়াতে চাইতো খুব
        বরফের ভাজি
        আমি নাকি হট মেজাজি ,
        হৃদয় শান্ত হবে।
        বলেছিলাম রংধনুটা রাঁধো,
        সুষম খাদ্য হবে।
        খাওয়াতে চাইতো
        শিশিরের স্যুপ,
        তারার চটপটি
       একটু সময় পেলে,
      আঁচলে বেঁধে     
      নিসে এসে জ্যোত্‍স্না
      মাথায় ধরত মেলে ।

৯।  শান্তরস → শমভাব

(ক) গাহি সাম্যের গান-
        সানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই
        নহে কিছু মহিয়ান।

(খ)    শ্রাবণ, তোমার কষ্ট কিসের এতো ?
        এতটা কাঁদলে কি আর চলে,
        কিছু অশ্রু ধরে রাখ বুকে
        আসছে বর্ষায় আবার কাঁদবে বলে

দৃষ্টি আকর্ষণঃ 

আমাদের ওয়েবসাইটে (Heart Academy) বিভিন্ন চাকরির বিজ্ঞপ্তিসহ চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নিয়মিতভাবে লেখা প্রকাশিত হয়ে থাকে। আমরা সাধারণ শিক্ষাসহ বিভিন্ন শিক্ষামূলক নিবন্ধ প্রকাশ করে থাকি।  তাই নিয়মিতভাবে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করার জন্য অনুরোধ রইল। ওয়েব এড্রেস: www.heartacademy.xyz । নিয়মিত আপডেপ পেতে উপরের ডান কর্ণার থেকে ওয়েবসাইটটি Follow করে রাখেতে পারেন। মনে রাখার জন্য নিচের সোস্যাল মিডিয়া আইকনে ক্লিক করে লেখাটি আপনার টাইম লাইনে সেইভ রাখতে পারেন অথবা আপনার নিকটজনের কাছে শেয়ার করতে পারেন।
......... ধন্যবাদ। 
Heart Academy



সাহিত্যের রস,#সাহিত্যের রূপ ও রস,ভাব ও রস,সাহিত্যে রস এর প্রভাব,সাহিত্যের রূপ রস অলঙ্কার ও ছন্দতত্ত্ব,বাংলা সাহিত্যের রস,বাংলা সাহিত্যে রস,সাহিত্যের রস চেনার উপায়,সাহিত্যের রস বের করব কী করে,সংস্কৃত সাহিত্যের রস আলোচনা,সাহিত্যের ভাব-রস, ভাব ও রস,রস,ভাব,কাম রস ও প্রেম রস,বিভাব,#রূপ ও রস,কাব্যে রস,কৃষ্ণ ভাব,ভাব কাকে বলে,সাহিত্যে রস এর প্রভাব,কাম রস,করুণ রস,রস কত প্রকার ও কী কী,#সাহিত্যের রূপ ও রস,কবিতার রস,অদ্ভূত রস,বৈষ্ণব রস,রস কাকে বলে,শৃঙ্গার রস,সাহিত্যের রস,অনুভাব,বাংলা সাহিত্যে রস,মধুর বা শৃঙ্গার রস, স্থায়ী ভাব কয়টি ও কি কি, রস কত প্রকার ও কি কি, রস কাকে বলে? রস কত প্রকার কী কী?, আদি রস কত প্রকার কি কি?

No comments

Theme images by Maliketh. Powered by Blogger.