Header ads

শব্দার্থ পরিবর্তনের কারণসমূহ | Causes of semantic change

 

 শব্দার্থ পরিবর্তনের কারণ

কোনো ভাষার শব্দ ব্যবহার অনেকটাই ঐ ভাষা ব্যবহারকারীর ইচ্ছানুগ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সভ্যতার বিবর্তন অনুযায়ী মানুষের মনের গঠন ও অভিজ্ঞতার তারতম্য ঘটে, তারই ফলে মানুষ যখন ভাষা ব্যবহার করে, তার নিজের সেই আভ্যন্তরীণ বদল ভাষার বাইরের কাঠামো যেমন বদলে দেয়, তেমনি তার ভিতরের অর্থটিকেও পরিবর্তিত হতে বাধ্য করে। পরিবর্তনই স্বাভাবিক নিয়ম। শব্দের ধ্বনি, রূপ তথা গঠন যেমন বদলায় তেমনি অর্থও বদলায়। ‘দুহিত’ > ‘ঝি’ - সব দিক থেকেই পরিবর্তন হয়েছে। দোহনকারী মেয়ে দুহিতা আজ কাজ করা - ঝি । তবে শুধু কালিক ইতহাস এ পরিবর্তনের জন্য একমাত্র দায়ী নয়, এর মূলে নানা কারণ নিহিত রয়েছে। বিভিন্ন ভাষাবিজ্ঞানীর পর্যালোচনা অনুযায়ী এই কারণগুলোকে প্রধানত  দুটি শ্রেণিতে বিন্যস্ত করা যায় যথা: (১) স্থুল কারণ ও (২) সূক্ষ্ম কারণ। এই দুই শ্রেণির ক্ষেত্রেই আবার নানা উপশ্রেণিতে বিভাজিত হবার মতো কারণসমূহও লক্ষ করা যায়। নিম্নে আলোচিত শব্দের অর্থ পরিবর্তনের কারণসমূহের মধ্যে প্রথম তিনটি স্থুল কারণ এবং বাকীগুলো সূক্ষ্ম কারণ হিসেবে চিহ্নিত। 

(১) ভৌগোলিক বা পারিবেশিক কারণ/ শব্দের ভাষাভান্ডার পরিবর্তন (Change of lingual repertoire) :  

    কথায় আছে- ‘এক দেশের বুলি অন্য দেশের গালি’। একই শব্দ ভিন্ন ভিন্ন ভৌগোলিক অঞ্চলে ভিন্নার্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন ফার্সিতে প্রচলিত ‘মুর্গ’, শব্দটির অর্থ যে কোনো পাখি। কিন্তু বাংলা ভাষায় প্রবেশ করে এর প্রয়োগ বিশেষ একটিমাত্র পাখি - মোরগ বা মুরগি বোঝাতে সীমাবদ্ধ। একইভাবে ফার্সী ‘দরিয়া’ শব্দটি মূলে ‘নদী’ বোঝালেও, বাংলায় এর অর্থ দাড়িয়েছে ‘সমুদ্র’।  চাঁচল-মালদহ অঞ্চলের ‘চ্যাংড়া’, ‘চেংড়ি’ দক্ষিণবঙ্গের ভাষীদের কাছে বদকথা (slang)-র সমগোত্রীয়।

(২) ঐতিহাসিক কারণ/ কালানুক্রমিক ধারা (Synchronic drift) :

    কাল বদলায়। শব্দের অর্থও বদলায়। চারদিকে ধারণাগত পরিবর্তন অবিরাম ঘটেই চলছে, শব্দও একই অর্থে স্থির থাকতে পারে না। জীবনযাত্রার পরিবর্তন অনেক সময় শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থকে পেছনে সরিয়ে ভিন্নতর অর্থকে সেইস্থানে প্রতিষ্ঠিত করে। যেমন- ধীবর = শ্রেষ্ঠবুদ্ধিজীবী (ধী=বুদ্ধি, বর= শ্রেষ্ঠ) এখন জেলে। আবার পাত্র = পান করার আধার এখন বিবাহের বর। আদিমকালে বিবাহযোগ্যা কন্যাকে বলপ্রয়োগে হরণ করা এবং বহন করে নিয়ে যাওয়ার প্রথা ছিল বলে এই বিশেষরূপে বহন করা অর্থে ‘বিবাহ’ এবং বলপ্রয়োগে গ্রহণ করা অর্থে ‘পানিগ্রহণ’ শব্দগুলি ব্যবহৃত হত। বর্তমানে এই বর্বর প্রথার অবসান ঘটলেও উল্লিখিত দুটি শব্দই এখন ‘পরিণয়সূত্র’ অর্থে ব্যবহৃত হয়। 

(৩) উপকরণগত কারণ :

    কোনো বস্তু যে উপকরণে তৈরি হয়, সেই উপকরণের নাম বা ধর্ম অনুযায়ী অনেকসময় ওই  বস্তুটির নামকরণ করা হয়। কিন্তু পরে সেই উপকরণটি পরিবর্তিত হয়ে গেলেও পুরনো নামটিউ বজায় থাকে। একসময়  জল বা বালিভর্তি ঘড়ার সাহায্যে সময় নিরূপণ করা হত, তাই তার নাম ছিল ‘ঘড়ি’। আধুনিক যান্ত্রিক সময়নির্ধারক যন্ত্র সম্পূর্ণ আলাদা একটি ব্যাপার হলেও তার নাম রয়ে গেছে ‘ঘড়ি’। তুলো দিয়ে তৈরি হ’ত বলেই ‘তুলি’, বর্তমানে যা নাইলন তন্তু বা পশুলোম দিয়ে তৈরি হয়, কিন্তু তার ‘তুলি’ নামটি অপরিবর্তিত। 
পুরনো নামটির যোগ উপকরণটির সাথে। আর এই পুরনো নাম দিয়ে যখন নতুন জিনিসটিকে বোঝাচ্ছি, তখন তার সম্পর্ক আর ওই জিনিসটি কীসে তৈরি হয়েছে সেই উপকরণের সঙ্গে নয়, শুধুমাত্র জিনিসটির সঙ্গেই। এরকম অর্থ পরিবর্তনের দৃষ্টান্ত আমাদের চারপাশে অনেক খুঁজে পাওয়া যাবে। পেপিরাস গাছ থেকে তৈরি বলে নাম হলো ‘পেপার’ অর্থাৎ পেপিরাস গাছের উপাদানে তৈরি বস্তু। এখন পেপার বলতে লেখার উপাদান কাগজ বুজালেও ভবিষ্যতে হয়ত শুধুমাত্র সংবাদপত্রও বুঝাতে পারে। 

(৪) সাদৃশ্য (Analogy) :

    ধ্বনি পরিবর্তনের মতো শব্দের অর্থ পরিবর্তনেও সাদৃশ্যের ভূমিকা অনেকখানি। আমাদের দেহের সমস্ত অঙ্গপ্রতঙ্গের মধ্যে মাথাই শ্রেষ্ঠ এবং সবার উপরে অবস্থিত, সেই কারণে এই অর্থসাজুয্যে শ্রেষ্ঠতা বা উচ্চতা বোঝাতে আমরা যথেচ্ছ ‘মাথা’ শব্দটি ব্যবহার করি। যেমন - ‘গাঁয়ের মাথা’, ‘গাছের মাথা’, ‘মাথায় রাখা’। ‘বড়’ বা ‘বৃহৎ’ অর্থে ‘রাম’ শব্দটির ব্যবহার (রামছাগল, রামদা) বা অনুরূপভাবে আকারের বিশালতা বা রাজকীয়তা বোঝাতে ‘রাজ’ শব্দটির প্রয়োগ (রাজপথ, রাজহাঁস) এক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয়। 
অর্থের দিক থেকে সাদৃশ্য থাকলে শব্দের প্রায়োগিক প্রসারতা লক্ষ করা যায়। যেমন: যিনি বা যে দেরিতে বোঝে = টিউব লাইট। কারণ টিউব লাইট একটু দেরিতে জ্বলে। আবার, তার অ্যান্টেনায় (মগজ ও বোধের ক্ষেত্রে) কিছু ধরে না। (অ্যান্টেনা’য় - টিভির সিগন্যাল ধরে। )

(৫) বিশ্বাস ও ধর্মীয় সংস্কার / মানসিক সংস্কার (Taboo) : 

    সাধারণ মানুষের ধারণা - অশুভ বিষয় বা বিপজ্জনক বস্তুর নাম উচ্চারণ করতে নেই। এই সংস্কারের বশেই কোনো অশুভ বিষয়কে শুভ বা শোভন শব্দ দ্বারা প্রকাশ করা হয়। গ্রামাঞ্চলে ঘরে চালের অভাবকে বলা হয় ‘চাল বাড়ন্ত’ আবার ‘মৃত্যু’ অর্থে ‘স্বর্গলোক’ বা ‘গঙ্গাপ্রাপ্তি’ বলা হয়।  এই প্রবনতায় অনেক সময় দেখা যায় - নতুন নামটির নতুন অর্থে প্রয়োগ হতে হতে তার অর্থগত পরিবর্তন ঘটে যায়। যেমন - ‘যাই’ বোঝাতে ‘আসি’, ‘সাপ’ বোঝাতে ‘লতা’ বা ‘পোকা’, ‘বসন্তরোগ’ বোঝাতে ‘মায়ের দয়া’ ইত্যাদি প্রয়োগ বাঙালি সমাজে প্রচলিত রয়েছে।

(৬) শব্দ প্রয়োগে অসতর্কতা ও অজ্ঞতা (Ignorance) :     

    কোন শব্দের মূল অর্থ না জেনে অথবা তাকে ভিন্ন বা আলাদা কোনো অর্থে প্রয়োগ করলে অজ্ঞতা বা অসতর্কতাজনিত অর্থান্তর ঘটে। যেমন- ‘পাষণ্ড’ শব্দের মূল অর্থ ‘বৌদ্ধ সন্ন্যাসী” কিন্তু অজ্ঞতার কারণে এখন ‘নিষ্ঠুর’ অর্থে ব্যবহৃত হয়।তেমনি, গোস্বামী অর্থ ছিল গরু প্রতিপালক (গো=গরু, স্বামী=প্রতিপালক), এখন ভগ্বৎ সেবক। 

(৭) অল্পায়াস প্রবণতা :

    আলস্য বশত ভাষা ব্যবহারে শৈথিল্য বা আরামপ্রিয়তার কারণে অনেক সময় একটি শব্দগুচ্ছ সম্পূর্ণ না বলে সংক্ষেপে কাজ চালানো হয়, এতে শব্দটির নতুন অর্থ সৃষ্টি হয়। ‘সন্ধ্যার সময় প্রদীপ দেওয়া’কে ছোট করে বলা হয় ‘সন্ধ্যে দেওয়া’। ‘চা ও জলখাবার’ না বলে সংক্ষেপে বলা হয় ‘চা-টা’। তেমনি ‘ক্ষৌর কর্ম’ থেকে ‘কামানো’, ‘বাইসাইকেল’ থেকে ‘বাইক’, ‘নিউজ পেপার’ থেকে ‘পেপার’ অল্পায়াস প্রবণতার ফল। 

(৮) আলংকারিক প্রয়োগ: 

    বক্তব্যকে সোজাসুজি না বলে, আলংকারিক বাচনভঙ্গি ব্যবহারের ফলে বহু শব্দেরই মূল অর্থ পেছনে সরে গিয়ে, বিচিত্র অর্থ প্রকাশ করতে দেখা যায়। যেমন - মাথায় করে রাখা, বাড়ি মাথায় করা, মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়া, মামার বাড়ি (জেলখানা অর্থে), শ্বশুড় বাড়ি(জেলখানা অর্থে), শ্রীঘর(জেলখানা অর্থে) বললে , আমরা ভুলেও এর মূল অর্থ খুঁজি না। কারণ এই আলংকারিক অর্থই আমাদের মধ্যে বদ্ধমূল। বিনয় বা নম্রতা দেখাতেও আমারা প্রায়ই শব্দের এ জাতীয় প্রয়োগ করি। নিমন্ত্রিতকে ‘দুটি ডালভাত’ খাবার জন্য অনুরোধ করি, নিজের বাড়িকে বলি ‘গরিবের বাড়ি’। তেমনি ‘লাল পানি’ বললে আমরা লাল রঙের যে কোনো পানীয় বুঝি না, অন্য কিছু(মদ) বুঝি, তেমনি ‘ভাত কাপড় দেওয়া’ মানে শুধু ভাত আর কাপড় দেওয়া নয়। 

(৯) কাব্যিক প্রয়োগ (Poetic) : 

    কবি সাহিত্যিকগণ প্রাচীন শব্দকে নতুন অর্থে, মনগড়া কাল্পনিক শব্দকে স্বতন্ত্র অর্থে ব্যবহার করতে পারেন। ফলে একদা প্রচলিত অর্থটির পরিবর্তে নতুন অর্থের প্রচলন হয়। যেমন : ‘ষড়রিপু হল কোদন্ড স্বরূপ’ (দাশরথি)। ‘কোদন্ড’ অর্থ ‘কোদাল’ । আবার ‘বারুণী’ শব্দের অর্থ ‘মদ’, কিন্তু মধুসূধন বরুণপত্নী অর্থে ‘বারুণী” শব্দটি ব্যবহার করেছেন। 

(১০) গোপনীয়তা (Secrecy): 

    অনেক সময় অপরাধ জগতের ভাষী, একালের আড্ডাবাজ যুবক-যুবতী ভাষীরা সংকেত বা ইঙ্গিতপূর্ণ ভাষার code  ব্যবহার করে। ফলে শব্দটির পুরাতন অর্থ পরিবর্তিত হয়। যেমন- চামচা/চামচ = স্তাবক, মুরগি = বোকা/ নাস্তানাবুদ ব্যক্তি। 

(১১) মানসিক সম্পর্ক (Relationship) :

    সামাজিক প্রয়োজন, মানবিকতা, সৌজন্যবোধ এবং ভদ্রতা ইত্যাদির প্রকাশের জন্য আত্মীয়তাবাচক শব্দগুলিকে অর্থের দিক থেকে ভাষী বদলে দেয়। যেমন: শবজি বিক্রেতাকে বলতে হয়, ‘দাদা, আলু কত করে?’, রিক্সাওয়ালাকে, ‘মামা, যাবেন?’। অনুরূপ, ‘মা, মাসিমা,বোনটি, দিদি, কাকু, ভাই ইত্যাদি শব্দ মানবিক সম্পর্কের তাগিদে অর্থগত প্রসারতা লাভ করে থাকে। 

(১২) পেশা (Occupation): 

    জীবিকার প্রয়োজনে বিভিন্ন পেশায় অভ্যস্ত ব্যক্তি তার পেশা সংশ্লিষ্ট শ্বদ প্রায়শ ব্যবহার করে, এতে একটি শব্দ অন্য অর্থ লাভ করতে পারে। যেমন: গ্যারেজকর্মী যদি বলে, ‘সক্কাল বেলাটা এক্কবারে পাংচার হয়ে গেল’ অথবা ব্যবসায়ী যদি কাউকে জিজ্ঞাসা করে ‘এ লাইনে কবে নামলেন?’ তবে ‘পাংচার’ ও ‘লাইন’ শব্দের অর্থ  দাঁড়ায় যথাক্রমে ‘বিনষ্ট’ ও ‘ব্যবসা’। 

(১৩) বাক্ - পরিবেশ ও পরিস্থিতি ( Environment and Situation of Speech) : 

    শব্দ বা কথা কোথায় বলা হচ্ছে, তার উপর অর্থ নির্ভর করে। একটি কথা বা শব্দ ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশ-পরিস্থিতিতে ভিন্ন ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করে। যেমন: ‘বাবা’ = পরিবারে ‘পিতা’, তীর্থে ‘সাধু’, শিবের ব্রতের সময় ‘শিব’ (ভোলে বাবা) ইত্যাদি। ‘মাল’ = মাতালদের আড্ডায় ‘মদ’, রকবাজদের কাছে ‘সুন্দরী যুবতী’, ব্যবসায়ীর কাছে ‘পণ্য বা পসরা’, গৃহস্থের কাছে ‘ঘরকন্নার দ্রব্যাদি’ (মালপদ্র)। 

(১৪) সুভাষণ (Euphemism) :

    ভদ্রতা, ভব্যতা, বিনম্রতা, অনুনয় ইত্যাদি প্রকাশের জন্য ভাষী বাজে শব্দকে মার্জিত করে, শিষ্টভাবে বলে থাকে। যেমন: ছোট বাইরে = মূত্রত্যাগ, বড় বাইরে = মলত্যাগ, গঙ্গাফল= মাছ, রামপাখি= মুরগি, মাসি = কাজের লোক। আবার, শাকান্ন = শাক আর অন্ন নয়, অন্যান্য খাবারও। ‘ভলমন্দ’ খাওয়া = খাওয়ার ক্ষেত্রে ভাল খাবার; ‘ভালমন্দ’ ঘটে যাওয়া = ঘটে যাওয়ার ক্ষেত্রে ‘দুর্ঘটনা’। 

(১৫) প্রক্ষোভ (Emotion): 

    নানা পরিবেশে ভাষীর প্রাক্ষোভিক সমতা থাকে না অথবা এক এক বাক্-পরিবেশ বা পরিস্থিতিতে এক এক ধরনের অর্থ  কাজ করে। ফলে শব্দের অর্থ বদলায়। যেমন: ‘ইম্মা’, ‘মাগো’, ‘বাব্বারে’ - ইত্যাদি ভয়-ভীতি, শোক-দুঃখ ইত্যাদি প্রক্ষোভের সঙ্গে জড়িত। এক্ষেত্রে ‘মা, বাবা’ বলতে যা বোঝায়, তা নয়। 

(১৬) দৈহিক - মানসিক বৈকল্য (Psycho-somatic deformity) :

    বাগযন্ত্রের সমস্যা, যেমন- জিভের জড়তা, ছোট বা বড় জিভ, দন্তের নানাবিধ সমস্যা, শ্রবণ যন্ত্রের ত্রুটি বিচ্যুতি ইত্যাদি যেমন বাক্-বিকার (Speech disorder) সৃষ্টি করে, তেমনি অর্থেরও পরিবর্তন ঘটায়। যেমন - ‘ন’ জোয়ান (নও জোয়ান) = নয় জন জোয়ান ও নবযুবক - এর অর্থ বোধ শ্রোতার মস্তিষ্কে তৈরি হতে পারে। শ্রুতির সমস্যায় ‘শসা’  হয়ে যায় ‘মশা’। অর্থও হয়ে যায় আলাদা। 

(১৭) তত্ত্বান্তর  :

    সমাজতত্ত্ব, দর্শন, রাজনীতি, সাহিত্য, আধাত্মতত্ত্ব ইত্যাদি বিষয় অনুযায়ী একটি শব্দের অর্থ  হয়ে থাকে। সমাজবিদ শব্দটি যেভাবে অর্থ ধরেন, ভাষাতাত্ত্বিক বা দার্শনিক সে-ভাবে ধরেন না। তাৎপর্যার্থের ক্ষেত্রেও হেরফের হয়। যেমন: ‘দর্শন’ : দেখা, সাক্ষাৎ, মনোজগতে অবলোকন, বিশেষভঙ্গিতে যাচাই, ভক্তি ভরে দৃক্ পাত, জ্ঞান, তত্ত্বজ্ঞান, প্রমাণ ও যুক্তি নির্ভর শাস্ত্র, চেহারা (সু-দর্শন)। শব্দটির তাৎপর্যার্থও নানাভাবে অভিব্যক্ত হতে পারে। 

    ভালভাবে লক্ষ করলে দেখা যায় বক্তা বা ভাষা ব্যবহারকারী ব্যক্তি তাঁর বিবক্ষা অনুযায়ী শব্দ ও অর্থের সম্পর্কটিকে নিয়ন্ত্রণ করেন। যে দৃষ্টান্তগুলি আমরা দেখলাম তাতে দুটি ধরনের পরিবর্তনসূত্র লক্ষ করা যায়। প্রথমত শব্দ যেখানে নিজেদেরকে অপরিবর্তিত রেখে অর্থকে বদলে নিচ্ছে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে (‘তুলি’, ‘বিবাহ’, ‘দরিয়া’ জাতীয় শব্দ) দ্বিতীয়ত অর্থ তার প্রাধান্য বিস্তার করে, তার পরিচ্ছদস্বরূপ শব্দটিকে বদলে নিচ্ছে (‘মাথা’, ‘গঙ্গাপ্রাপ্তি’, ‘পাষণ্ড’ ‘সন্ধ্যে দেওয়া’ ‘শ্রীঘর’ ইত্যাদি শব্দের মতো দৃষ্টান্ত)। আরও সূক্ষভাবে বলতে গেলে অর্থ পরিবর্তনের স্থূল কারণগুলি প্রথম ক্ষেত্রে সক্রিয়, আর দ্বিতীয় ক্ষেত্রে সকিয় হয়ে উঠেছে অর্থ পরিবর্তনের মনস্তত্ত্ব নির্ভর সূক্ষ্ম কারণগুলি। 

No comments

Theme images by Maliketh. Powered by Blogger.