ম্যাক্সিম গোর্কির মা এক অবিস্মরণীয় চরিত্র ।। Analyze the character of mother in the novel 'Mother' by Maxim Gorky
"বিশ্বসাহিত্যের সমগ্র ইতিহাসে নিলভ্না চরিত্রটি আপন বৈশিষ্ট্যে অতুলনীয় ও অদ্বিতীয়"
'মা' উপন্যাসে নিলভ্না চরিত্রের মাধ্যমে শিল্পী গোর্কির নৈতিক দৃষিটভঙ্গি মূলত রূপায়িত হয়েছে। ফলে চরিত্রটি কেন্দীয় চরিত্রের মর্যাদা লাভ করেছে। এ চরিত্র, সাধারণ এক শ্রমিক মায়ের কাছে উপন্যাসটি নামের জন্য ঋণী।
উপন্যাসের সূচনায় নিলভ্না এক অতি সাধারণ চরিত্র- বিশ শতকের একেবারে গোড়ার তিকে আর দশটা শ্রমিকের স্ত্রী যেমন হয়ে থাকে। কারখানার অতিরিক্ত মেহনতে শ্রমিকদের দেহ আত্মা পঙ্গু হয়ে যায়, জীবনের সেই গ্লানি ভোলার জন্য তারা কেবল মদ খায় আর বৌদের ধরে বেদম পিটায়। তেমনি একজন শ্রমিক মিখাইল ভাসভের স্ত্রী নিলভ্না। নিজের সংসারেই সদাশঙ্কিত অস্তিত্বক্লিষ্ট এক নারী। যতদিন স্বামী বেঁচেছিল ততদিন শুধু মার খেতে খেতেই জীবনটা কেটেছে। বঞ্চনা, গঞ্জনা আর নির্যাতন এই তো ছিল জীবনের একমাত্র অবলম্বন। নিলভ্নার ভাষায়,
"কেন যে বেঁচে ছিলুম জানি নে। খেটেছি ... ... স্বামী ছাড়া আর কাউকে দেখিনি ...... খালি ভয়ে ভয়ে থেকেছি, ভয় ছাড়া আর কিছুই জনি নে। ... .. দিন রাত্তিরের এক কাজ আর এক চিন্তা ছিল - কি করে ভালো ভালো খাবার দিয়ে পাষণ্ডটার পেট পোরাব, তার মন যুগিয়ে চলব। পান থেকে চুন খসলেই তো ধরে মারবে। উঃ অষ্টপ্রহর কী যে ভয়ে ভয়ে থাকতে হতো। একদিনও ভালো মুখে একটা কথা বলে নি। কী মার মারত। ... .. মার দিতে দিতেই আমার আত্মাটাকে একেবারে কুলুপ এঁটে দিল।" (অধ্যায় ১৬: ১ম খণ্ড)
এভাবে ঘটেছিল নিলভ্নার আত্মার সমাধি- অপর দশটা শ্রমিকের স্ত্রীর মতো। কিন্তু তার ছেলে পাভেল ভ্লাসভ যখন কারখানা বস্তির এ অভ্যস্ত জীবনধারা থেকে সরে গিয়ে হয়ে দাঁড়ায় বিপ্লবী, তখন ছেলের পাশে তার কাধেঁ কাঁধ লাগিয়ে মাও হয়ে উঠেন বিপ্লবী। ছেলের পরিবর্তনের সাথে মারও পরিবর্তন ঘটে। মা বিপ্লবী ছেলের পাশে দাঁড়িয়ে তার আদর্শের উপযোগী হতে চেয়েছেন। ফলে নিজের মধ্যে তিনি লক্ষ্য করেন পরিবর্তন,
"এখন জীবনটা অন্য রকম হয়ে গেছে, আমার ভয়- ডরের চেহারাও বদলে গেছে। ..... .... আমার মনটাই অন্যরকম হয়ে গেছে। আমার অন্তর আমার চোখ খুলে দিয়েছে। .. .. আজকাল জীবনটা আমার অনেক ভালো হয়ে উঠেছে। একটু একটু করে নিজেকে বুঝতে পারছি।" (অধ্যায় ১৬: ১ম খণ্ড)
বিপ্লবের আদর্শে উজ্জীবিত মার বিবর্তন ঘটে। একটা সময় যে মা ছিলেন মূক, বিপ্লবের মন্ত্রে দীক্ষা নিযে তিনিই হয়ে উঠেছেন মুখর। তিনি দেখতে পান বিপ্লবের মন্ত্রে কিভাবে বদলে গেছে ছেলে পাভেলের জীবন। যে পাভেল ছিল আর দশটা সাধারণ তরুণ শ্রমিকের মতো; তার মধ্যে যেন একটা পরিবর্তন সূচিত হয়েছে। মাতৃসুলভ গর্বে তার বুক ফুলে উঠে,
"আজ ... ছেলে সামনে বসে আছে, সে মায়ের ব্যথা বুজছে, মায়ের দুঃখে তার প্রাণ কেঁদেছে। ... ... তার চোখ মুখের অভিব্যক্তি, তার কথাগুলো মায়ের মনটা ছুঁয়ে যায়। ... ... অত বড় কাজ একা হাতে তুলে নিয়েছে।" (অধ্যায় ৪: ১ম খণ্ড)
নিলভ্না চরিত্রে মাতৃত্বের এক বিশ্বরূপ প্রত্যক্ষ করা যায়। গোর্কি মাতৃহৃদয়ের বাৎসল্যের এক অপূর্ব চিত্র অঙ্কন করেছেন। ছেলে পাভেলের প্রতি মায়ের মমত্ব ও ভালোবাসা অপরিসীম। তবে শুধু পাভেল নয়, উপন্যাসে নিলভনা হয়ে উঠেছেন সকল কমরেডদের 'মা'। পাভেলের কমরেডরাও তাকে 'মা' বলে। গোর্কির উপন্যাসের একটা প্রধান, একটা মূল কথা এখানে নিহিত। নিলভনার সাথে সম্পর্ককেই তার চারপাশের বিপ্লবীরা, পাভেলের কমরেডরা এক আত্মিক ভ্রাতৃত্ব ও বিশ্বভ্রাতৃত্ব অনুভব করেছে।
মায়ের ভলোবাসা বিশ্বজনীন। ছেলের মাধ্যমে তিনি সবাইকে ভালোবাসেন খখোল, নাতাশা, সাশা, সোফিয়া, নিকলাই, ইগোর, চাষি স্তেপান ও তার বৌ তাতিয়ানা, রীবিন এবং আরো অনেককে। নাতাশাকে তিনি মোজা তৈরি করে দিয়েছেন; প্রতি সপ্তাহে খখোলের জন্য বই আর জামা-কাপড় নিয়ে জেলে গেছেন; পলাতক আসামি নিকলাইয়ের জন্য তিনি বাজার থেকে পোশাক কিনে এনেছেন; মৃত্যু পথযাত্রী ইগোর সেবা করেছেন। এভাবে তার ভাবনা সবার জন্য তার কথায়,
"এখন সবার জন্যই চিন্তা। ..... সকলকেই ভালোবসি। সবাই আমার আপনজন, খাবার বিক্রির অজুহাতে নিয়মিতভাবে ইশতিহা নিয়ে গেছেন। গোয়েন্দারা তাকে দেখে, বিশেষ নজর দেয় না। কয়েকবার আবার তল্লাশির পালায় পড়েছেন। তারা মাকে ধরে তল্লাশি করে, তিনি রাগ করেন, তর্ক করেন। দেখান যেন ভয়নক অপমান হয়েছে। শেষ পর্যন্ত ওদের অপ্রস্তুত করে নিজের বুদ্ধির তারিফ করতে করতে বুক ফুলিয়ে চলে আসেন। সবার জন্য ভাবি। অহরহ এ কামনাই করি সবাই যেন সুখী হয়।" (অধ্যায় ১৬: ১ম খণ্ড)
বিপ্লবের মন্ত্রে উজ্জীবিত নিলভ্না এখন অন্য মানুষের কথা ভাবে, ভয় পায়, কেননা ভালোবাসাই আশংকা জাগায়। নিলভ্না চরিত্রটিকে গোর্কি বিপ্লবের প্রতিভূস্বরূপ অঙ্কন করেছেন। এ উপন্যাসে নিলভ্নার যে পথ, সেটা শ্রমিক জনের বিপ্লবে পৌছানোর পথ। বিপ্লবের আদর্শকে বাস্তবে রূপায়িত করতে তিনি সর্বসত্তা নিয়োজিত করেছেন। বিপ্লবের আদর্শ প্রচার করতে গিয়ে পাভেলকে কয়েকবারই জেলে যেতে হয়েছে। কিন্তু বিপ্লবের প্রচার কার্য থেমে থাকে নি। নিলভ্না ছেলের কাজকে বাস্তবে রূপ দিতে অগ্রসর হয়েছেন এবং বলেছেন,
"দেখুক ওরা, জেলে থেকেও হাত চলে আমার পাভেলের। দেখুক, ভালো করে দেখুক।"
বিপ্লবের কাজে নিলভ্না নানাভাবে সাহায্য করেছেন। কারখানায় তাছাড়া নাতাশার কাপড়-কলের স্কুলে বেআইনি বই, পুস্তিকা আর খবরের কাগজ যোগান দিয়েছেন। মায়ের বিপ্লবী কর্মের বর্ণনা দিতে গিয়ে গোর্কি লিখেছেন,
"এ হলো এখন ওর কাজ। মাসের মধ্যে বার কয় বেশ বদলে, কখনো সন্ন্যাসিনী, কখনো লেস আর কাটা-কাপড়ের ফেরিওয়ালী, কখন সঙ্গতিপন্ন নাগরিক বা মুসাফির সেজে, ঝোলা কাঁধে নয়তো স্যুটকেস হাতে প্রদেশটা চক্কর দিয়ে আসে। ট্রেনে, জাহাজে, হোটেলে, সরাইখানায় যেখানেই থাক, সেই শান্তশিষ্ট সহজ-সরল মানুষটি। অচেনা লোকদের সাথে নিঃসঙ্কোচে আগে গিয়ে আলাপ করে। অত্যন্ত মিশুক স্বভাব, মুখে বহু অভিজ্ঞতা প্রসূত একটা আত্ম প্রত্যয়ের ছাপ। লোকদের মন নির্ভয়ে সহজেই কাছে আসে।"
সহৃদয় নিলভ্না মানুষ জনের সাথে কথা বলে তাদের সুখদুঃখের কথা জেনেছেন। 'পেট ভরে খেতে পাওয়ার জন্য সংগ্রামে মানুষের ব্যস্ত সমস্ত উদ্বিগ্ন জীবন ক্রমশ বিস্তারিত বিচিত্ররূপে' তার সামনে উদ্ঘাটিত হয়েছে। আর আমরা পাঠকেরা আমাদের চারপাশের দুনিয়াটাকে দেখেছি এ মায়ের চোখ দিয়ে, ঘটনার মূল্যায়ন করেছি তারই মূল্যবোধ নিয়ে।
"সর্বত্র পরিষ্কারভাবে দেখতে লাগল মানুষকে বোকা বানিয়ে রাখা , লুট করা, লাভের জন্য তার যা কিছু সম্ভব শুষে নেওয়া, তার রক্ত করার রূঢ় অনাবৃত নির্লজ্জ লিপসা। মা দেখে সংশয়ে কিছুরই অভাব নেই, তবু দুনিয়ার অজস্র ধনসম্ভাবের সামনে জনগণ অনশনে, ধুঁকে ধুঁকে জীবন কাটায়। শহরের গির্জায় গির্জায় কী অঢেল ঐশ্বর্য । সোনা রূপো দু'হাতে ছড়ানো তার এক কণারও দরকার নেই ভগবানের, অথচ সেই গির্জারই দরজায় অর্ধ-উলঙ্গ ভিখারির দল অবহেলায় ছুঁড়ে দেয়া একটা ছোট্ট তামার পয়সার জন্য শীতে কাঁপতে কাঁপতে হাত পেতে দাঁড়িয়ে থাকে। ... মনে হয় দরিদ্রের এত বড় অপমান আর নেই।"
ভগবানের অস্তিতের সরল বিশ্বাসী নিলভ্নার নতুন চেতনা জাগে। তার মনে হতে থাকে যিশুর যেন পুনরুজ্জীবন ঘটেছে। তিনি যিশুর অস্তিত্ব খুঁজে পান জনসাধারণের মধ্যে। নিলভ্না অনুভব করেছেন, রক্তে স্নাত বিপ্লবীর আত্মহুতির মধ্যেই যিশুর পুনরুত্থান।
"মানুষের এ দুর্ভাগা বন্ধুর কথা যারা নীতি বাগীশের মতো আওড়ানি অথচ তাঁরই নামে নিজেদের উষ্ণরক্ত অঢেল মান করেছে তাদেরই রক্তে স্নান করে যেন পুনরুত্থান হয়েছে তার।"
বিপ্লবের মন্ত্রে নিলভ্নার আত্মশুদ্ধি ঘটেছে। তিনি সকলকে সে মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ করবার প্রয়াস পেয়েছেন।
তবে মা যে নির্বিরোধ আদর্শে পৌছেছেন তা একদিনে নয়। তাকেও কঠোর অন্তর্দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হয়েছে। পাভেল বিপ্লবী হয়ে উঠেছে, জীবনের সর্বনাশা চেহারাটা অমন খাঁটি করে বুঝেছে তার ছেলে; এটা ভেবে একদিকে নিলভ্নার গর্ব, আর অন্যদিকে ভয় জেগেছে। কিন্তু তিনি কখনো বাধা দেন নি। যদিও পাভেল ও অন্যান্য বিপ্লবীদের জন্য তার মন আকুল হয়ে উঠেছে। পাভেল জেলে - জানেন কড়া সাজা হবে। তবু কেন জানি এসব ভেবে মা আর ভয় পান না। যে পথে পাভেল গেছে, গেছে তার সাথীরা রাতের আঁধারে সে পথখানি মায়ের চোখে ভাস্বর হয়ে উঠে। তার মনে হয়,
"আন্দ্রেই, ফেদিয়া এবং আরো অনেককে। যারা এ পথে গেছে তাদের সবারই মধ্যে, ছড়িয়ে আছে পাভেল। .. ... ফলে তার মন কোন একটা কিছুতে, বিশেষত ছেলের জন্য ব্যাকুলতা আর ভয়ে নিবন্ধ হতে পারে না।"
এক সময় পাভেল মে দিবসের পতাকা বহন করবে বলে নিলভ্নার কত আশংকা হয়েছে। অথচ পাভেল গ্রেফতার হলে তিনি সে ভাঙা পাতাকা হাতে তুলে নিয়েছেন। 'এক হাতে পতাকা দণ্ডটার উপর ভর দিয়ে এক হাতে দেয়াল বা বেড়া আঁকড়ে ধরে ধীরে ধীরে হাটে মা'। ছেলের আরাধ্য অথচ অসমাপ্ত কর্মের ভার এভাবে তিনি স্বেচ্ছায় ও আনন্দে গ্রহণ করেছেন।
মাতৃসুলভ বাৎসল্যে নিলভ্না পাভেলকে গৌরবমণ্ডিত করে দেখেছেন। ছেলের কথা বলতে গিয়ে ফুলে উঠে মায়ের বুক। 'মাতৃগর্ভে মানসলোকে পুত্র হয়ে উঠে এক বীর পুরুষ'।
" এ নিয়ে দু'বার জেল কাটা হলো ছেলের কারণ দেবতার সত্যকে বুঝে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছে ... ... ওই হল তার অপরাধ। ... ওই তো বের হয়েছে ওই কাগজ। ওর মাথারই কাজ।"
নিলভ্না দেখতে পান ছেলের মত অসংখ্য বিপ্লবী জন্ম নিচ্ছে যারা বিপ্লবের আদর্শ বাস্তবায়িত করে তুলতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তাই বলেছেন,
"ওর মত অনেক মানুষ আছে; যারা জন্মাচ্ছে দিনে দিনে । যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিন তারা লড়াই করে যাবে সত্যের জন্য, মানুষের মুক্তির জন্য"
এভাবে মা সব কমরেডদের মধ্যে আশ্বাসের বাণী যুগিয়েছেন। তিনি নির্যাতিত মানুষের মধ্যে, সর্বহারাদের শোষিত বঞ্চিতের মধ্যে সিজেকে ব্যাপ্ত প্রসারিত করে দিয়েছেন।
বিপ্লবের পথে , সংগ্রামের পথে কাজ করতে গিয়ে পাভেল স্বেচ্ছাচারী রাজশক্তি কর্তৃক সাইবেরিয়ায় নির্বাসিত হয়েছে। ছেলের জন্য, অন্যদের জন্য মায়ের বুক ফেটে কান্না এসেছে। কিন্তু তিনি হতোদ্যম হন নি। আদালতে পাভেল যে বক্তৃতা দিয়েছে তার বয়ান ছাপা বেআইনি। প্রচারপত্র তিনি বিলি করেছেন জনসাধারণের মধ্যে। পাভেলের কথা জনতার কাছে প্রচার করেছেন বিপ্লবের বাণী। আর তা করতে গিয়ে স্যুটকেস সমেত নিলভ্না ধরা পড়েছেন সশস্ত্র পুলিশের হাতে। তারা তাকে লাঞ্চিত করেছে, মেরেছে কিন্তু সকল অন্যায়ের মুখেও তিনি পরবশ্য স্বীকার করেন নি। পুলিশ ধরে নিয়ে যাবার আগ মুহূর্তেও তিনি ভিড় করে আসা লোকদের বলতে চেয়েছেন জীবনের সত্য কি; জল্লাদদেরে মুখের উপর তিনি চিৎকার করে বলেছেন,
"যে আত্মার নতুন করে জন্ম হয়েছে, তাকে মারতে পারবে না ওরা। ... ... রক্তের সমুদ্দুর বইয়ে দিলেও সত্যকে ডুবিয়ে দিতে পারবে না। ... ... নির্বোধের দল। শুধু মানুষের ঘৃণাই কুড়ুচ্ছ। একদিন উল্টে তোমাদেরই মাথায় পড়বে। "
নিলভ্না পুনরুজ্জীবনের বাণী বহন করেছেন। তার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে অসংখ্য অগণিত বিপ্লবী এক নতুন সমাজ গঠনের জন্য আত্মহুতি দিয়েছে। তাই 'মার' ধ্বংস নেই, ক্ষয় নেই।
গোর্কি মা চরিত্রে প্রতীক সৃষ্টি করতে সমর্থ হয়েছেন। বলা হয়েছে মা বিশ্বের শোষিত নির্যাতিত সর্বহারা মানুষের রক্তাক্ত সংগ্রামের প্রতীক। রক্তাক্ত সংগ্রামের পথে তিনি আশা ও আশ্বাসের বাণী বহন করে নিয়ে এসেছেন। বিপ্লবের বাণী তিনি দ্বারে দ্বারে পৌছে দিয়েছেন। তাই তিনি শুধু বিপ্লবের সারথী নন, বিপ্লবের প্রতিভূস্বরূপ। যার প্রতিমূর্তি শুধু রুশ বিপ্লবের প্রেরণারূরপ সক্রিয় হয় নি, যারা বিশ্বের বিপ্লবীদের প্রেরণা যুগিয়েছে ও যোগাবে।
নিলভ্না চরিত্রটি গোর্কি বাস্তব জীবন থেকে সংগ্রহ করেছেন। সোর্মভ শ্রমিক পিওতর জালোমভ'র মা আন্না কিরিলোভনা ঝালোমভের চরিত্র অবলম্বনে মা চরিত্রটি অঙ্কিত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে গোর্কির মন্তব্য,
"নিলভ্না হল পিওতর জালোমভের মায়ের প্রতিচিত্র, সোর্মভয় ১৯০২ সালের ১ মে'র মিছিলের জন্য পিওতর জালোমভের বিচার হয়। তার মা সংগঠনের কাজ করতেন, ছদ্মবেশে সাহিত্য পৌছে দিতেন।"
ছোটখাটো চেহারার এ বৃদ্ধা, তাঁর আশ্চর্য জীবন্ত চোখে অমায়িক সাথি গোর্কিকে বিশেষভাবে উদ্বুদ্ধ করেছে। রুশ বিপ্লবীর শ্রেষ্ঠ গুণাবলি যেন গোর্কি তাঁর মধ্যে প্রত্যক্ষ করেছেন। ফলে তিনি তাকে অবলম্বন করে নিলভ্না চরিত্রটি অঙ্কন করেছেন। বাস্তব রূপায়ণ সত্ত্বেও চরিত্রটি একটি প্রতীকে রুপান্তরিত হতে পেরেছে, এখানেই এ চরিত্রটি সৃষ্টিতে গোর্কির অসাধারণ কৃতিত্ব।
নিলভ্না চরিত্রটি গোর্কির এক অবিস্মরণীয় চরিত্র। চরিত্রটি উপন্যাসের নায়ক চরিত্রের মর্যাদা লাভ করেছে। নিলভ্নাকে ঔপন্যাসিক তাঁর উপন্যাসে অমর করে রেখেছেন নতুন যুগের সমাজ চেতনার প্রতীক চরিত্র রূপে। এ চরিত্রটির মাধ্যমে আমরা এ আশ্বাসবাণী লাভ করি যে, স্বেচ্ছাচারী শাসকের শাসনদণ্ড একদিন না একদিন ধূলায় অবলুণ্ঠিত হবে এবং যারা সর্বহারা তাদের জয় অবশ্যম্ভাবী। নিলভ্না ঔপন্যাসিকের মৌলিক পরিকল্পনার অঙ্গভূত এবং বিশেষ আদর্শের বাহনরূপে তাকে অঙ্কন করেছেন। 'বিশ্বসাহিত্যের সমগ্র ইতিহাসে নিলভ্না চরিত্রটি আপন বৈশিষ্ট্যে অতুলনীয় ও অদ্বিতীয়।
মেঘদূত কাব্যের যৌনতার বিষয়গত সার্থকতা আলোচনা কর ।। Sexuality in 'Meghdoot' poetry |
No comments