দুর্গা চরিত্র সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ।। 'Durga' character of "Pather Panchali"
দুর্গা চরিত্র সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ।
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়(১৮৯৪-১৯৫০) রচিত "পথের পাঁচালী"(১৯২৯) বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ। তাঁর প্রথম ও শ্রেষ্ঠ উপন্যাস 'পথের পাঁচালী'র একটি উল্লেখযোগ্য চরিত্র হরিহর রায়ের কন্যা দুর্গা। বিভূতিভূষণ নিজেই বলেছেন যে তিনি যখন প্রথম 'পথের পাঁচালী' লেখেন তখন তাতে শুধু অপুই ছিল, দুর্গা ছিল না। আমাদের পক্ষে অবশ্য আজ দুর্গাহীন অপুকে কল্পনা করাও দুঃসাধ্য।
"দশ-এগারো বছরের মেয়ে। পাতলা গড়ন, চাপা রং। হাতে কাচের চুড়ি, পরনে ময়লা কাপড়, মাথায় চুল রুক্ষ- বাতাসে উড়ছে, মুখের গড়ন মন্দ নয়, চোখ দুটি ডাগর।"
কিশোরী দুর্গার এই ছবিটি অবিস্মরণীয়। সে একা একাই চৈত্রের দুপুরে ঘুরে বেড়ায় পথে ঘাটে, জঙ্গলে, কুড়িয়ে বেড়ায় আম. ওড়কলমী ফুল, মাকাল ফল, বেনেবউ, খাপরা, কামরাঙা, বড়োফুলের বাঁচি। আপন মনেই সে খেলা করে। "পরে কি ভাবিয়া রুক্ষ চুলগুলো বাতাসে উড়াইতে উড়াইতে মহা খুশির সহিত পুনরায় সোজা বাটির বাহির হইয়া গেল।"
দুর্গা বনে-জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসে, কিন্তু প্রকৃতির অন্তর্লোকের কোনো খবর রাখে না। অথচ সেই অপুকে প্রকৃতির সঙ্গে পরিচিতি করে দিয়েছিল-
তার হাত ধরেই অপু নিসর্গ-সৌন্দর্যের মায়ালোকে প্রবেশ করেছিল। দুর্গা বেপরোয়া স্বভাবের মেয়ে। মায়ের নিষ্ঠুর ভর্ৎসনা ও নির্মম প্রহার, প্রতিবেশীদের নিন্দামন্দ, কিছুই সে গ্রাহ্য করে না। অত্যন্ত লোভী পরের বাগানের ফল থেকে পরের ঘরের সোনা পর্যন্ত লোভের বশবর্তী হয়ে কিছুই তার চুরি করতে বাধে না। অথচ এই দুর্গাই স্নেহ ও মমতার প্রতিমূর্তি হয়ে দেখা দেয় মাঝে মাঝে। অপুর প্রতি স্নেহের অন্ত নেই । অন্নদা রায়ের পুত্রবধুকে সে ভালোবাসে। বাবা-মাকেও সে না ভালোবেসে থাকতে পারে না। বিধবা পিসি ইন্দির ঠাকরুনকে এত ভালোবাসে যে লোকের মনে হয় পূর্বজন্মে সে বোধ হয় বুড়ির মেয়ে ছিল। এই ভালোবাসার জোরেই দুর্গা আমাদের চিত্ত জয় করেছে।
দুর্গাকে লেখক প্রকৃতির সারল্য, মুক্তি ও আনন্দের প্রতিমারূপে উপস্থিত করেছেন। এই প্রতিমা বাস্তব সংসারে মানায় না। তাই অল্প বয়সেই দুর্গাকে যেতে হয়। কোন এক দুর্যোগের শেষে এক প্রসন্ন শারদ প্রভাতে যখন সমস্ত পৃথিবী সূর্যালোকে উজ্জ্বল, তখন ম্যালেরিয়া জ্বরের শেষ পর্যায়ে খুব জ্বরের বিরামে দুর্গার হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে গেল। সর্বজয়া মেয়ের মুখের উপর ঝুঁকে পড়ে বলেছে, "ও দুগগা চা দিকি--- ও দুগগা----- দুগগা আর চাহিল না।" মৃত্যুর দুদিন আগে অপুর কাছে দুর্গার শেষ অনুরোধ--"আমায় একদিন রেলগাড়ি দেখাবি?"
দুর্গা যতদিন বেঁচে ছিল এক মুহূর্তও তাকে ভুলে থাকতে পারিনি, মরে গিয়েও উপন্যাসের শেষ পৃষ্ঠাখানি পর্যন্ত স্মৃতির সৌরভে সমাচ্ছন্ন করে রেখেছে। বাংলা সাহিত্যের অমর সৃষ্টি "পথের পাঁচালী"র দুর্গা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
চোখের বালি উপন্যাস অবলম্বনে |
কালিদাসের 'মেঘদূত' কাব্যের যক্ষপ্রিয়া চরিত্রের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও Yakshapriya in Kalidasa's 'Meghdoot |
No comments