ইন্দির ঠাকরুনের পরিচয় দাও - 'Indir Thakurun' from 'Pather Panchali'
ইন্দির ঠাকরুনের পরিচয় দাও
ঔপন্যাসিক বিভূতিভূষণের প্রথম ও শ্রেষ্ঠ উপন্যাস 'পথের পাঁচালী'র একটি উল্লেখযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র ইন্দর ঠাকরুন। হরিহরের দূরসম্পর্কীয় দিদি ইন্দির ঠাকরুন। শোনা যায়, পূর্বদেশীয় এক নামজাদা কুলীনের সঙ্গে ইন্দির ঠাকরুনের বিবাহ হয়। স্বামী বিবাহের কালভদ্রে তাকে দেখতে আসতো। স্বামী-পিতা-মাতার এবং ভায়ের মৃত্যুর পর সে রামচাঁদের সংসার থেকে হরিহরের সংসারে প্রবেশ করে।
হরিহরের পুবের ভিটায খড়ের ঘরখানা অনেকদিন বে-মেরামতি অবস্থায় পড়ে ছিল। এই ঘরটাতে বুড়ি থাকে। একটা বাঁশের আলনায় খান দুই ময়লা ছেঁড়া থান। একপাশে একখানা ছেঁড়া মাদুর ও কতকগুলো ছেঁড়া কাঁথা। একটা পুটুলিতে রাজ্যের ছেঁড়া কাপড় বাঁধা একটি বেতের পেটরার মধ্যে একটা পুটলি বাঁধা কতকগুলো ছেঁড়া লালপাড় শাড়ি। তার মেয়ে বিশ্বেশ্বরীর একটা পিতলের চাদরের ঘটি। একটা মাটির ছোব, গোটা দুই মাটির ভাঁড়। মাটির ভাঁড়গুলোতে কোনোটাতে থাকতো একটু তেল, নুন, খেজুরের গুড় ইত্যাদি। তাঁর চোখের সামনে নিশ্চিন্দিপুরের অনেক পরিবর্তন হয়। তাঁর একটি মেয়ে ছিল নাম বিশ্বেশ্বরী। বিয়ের কিছুদিন পরেই তার মেয়েটি মারা যায়। হরিহরের মেয়ে দুর্গা ইন্দির ঠাকরুনকে খুব ভালোবাসতো। একান্ত বাধ্য হয়েই ইন্দির ঠাকরুন হরিহরের সংসারে - সর্বজয়ার গালমন্দ সহ্য করে গলগ্রহ স্বরূপ দু'মুঠো অন্নের জন্য 'বালাই' হয়ে পড়েছিল। ইন্দির ঠাকরুন আসলে মহাকুলীনের অন্যতম বলি। তিনিই 'পথের পাঁচালী'র বল্লালী বালাই। পঁচাত্তর বছরের বৃদ্ধা বেঁচে আছে শুধু নিশ্চিন্দিপুরের অতীত ইতিহাসের একমাত্র সাক্ষীরূপে। ঘরে-বাইরে অপমান ও হেনস্থা, শুধু দূর-দূর-ছাই-ছাই। যে হরিহরকে সে এত ভালোবাসে তার বউ সর্বজয়া তাকে দুচক্ষে দেখতে পারে না, দুবেলা তাকে নানরকম অকথা-কুকথা বলে। সবই আজ যেন তার গা সওয়া হয়েছে- দুঃখ ছাড়া জীবনের কাছে তার যে আর কিছু পাপ্য থাকতে পারে সে কথা আজ সে একেবারে ভুলে গেছে। কিন্তু এত দুঃখের মধ্যেও তার একটা শান্তনাস্থল আছে, সে দুর্গা। লেখক ইন্দির ঠাকরুনের মৃত্যুকে দেখেছেন একটি কালের অবসানরূপে। লেখকের ভাষায়- "ইন্দির ঠাকরুনের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে নিশ্চিন্দিপুর গ্রামে সেকালের অবসান হইয়া গেল।"
সুতরাং বলা যায়- একটি বিশেষ কালের পরিবেশকে তুলে ধরতে গিয়ে ঔপন্যাসিক ইন্দির ঠাকরুণ চরিত্রের সাথে পাঠককে পরিচয় করিয়ে দেন; এরই মধ্য দিয়ে পাঠক যেমন ইন্দির ঠাকরুনের জন্য মমতারসে সিক্ত হন- তেমনি বল্লাল সেন আমলের 'কৌলিন্যপ্রথা' সম্পর্কেও অবগত হন। মূলত ইন্দির ঠাকরুন একটি বিশেষ কালে নীরব সাক্ষী হয়ে আছেন।
দুর্গা চরিত্র সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ
'Durga' character of "Pather Panchali"
চোখের বালি উপন্যাস অবলম্বনে |
No comments