Header ads

প্রমিত ভাষা ও উপভাষার পার্থক্য এবং প্রমিত ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্র ।। Difference between Standard Language and Dialect

 প্রমিত ভাষা ও উপভাষার পার্থক্য এবং প্রমিত ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্র

প্রমিত ভাষা ও উপভাষার পার্থক্য এবং প্রমিত ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্র

দৈনন্দিন জীবনে মানুষ ভাষা ব্যবহার করে থাকে। ভাষার প্রয়োগ মানুষের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে সংশ্লিষ্ট। মানুষের ভাষা ব্যবহারের রয়েছে নানা ক্ষেত্র। আনুষ্ঠানিক ক্ষেত্রে ভাষার প্রমিতরূপের ব্যবহারের গুরুত্ব রয়েছে। প্রত্যেক ভাষীর উচিত ভাষার প্রমিত রূপের প্রতি সচেতন হওয়া।
        প্রমিত ভাষা বলতে কী বোঝায়:
    কোনো দেশের মানুষের মধ্যে সর্বজনগ্রাহ্য ভাষার রূপ হলো প্রমিত রূপ। এ রূপ সর্বসাধারনের মধ্যে ব্যবহৃত হয় এবং সবাই এ ভাষা বোঝেন।  অঞ্চলভেদে ভাষার পার্থক্যেল কারণে এক অঞ্চলের মানুষ অন্য অঞ্চলের ভাষা সঠিকভাবে না বুঝলেও প্রমিত ভাষার ক্ষেত্রে এ সমস্যা হয় না। শিক্ষা ও আনুষ্ঠানিক কাজে ভাষার এই প্রমিত রূপের ব্যবহার অধিক লক্ষণীয়। 
  
    প্রমিত ভাষার বৈশিষ্ট্য:
    প্রমিত ভাষার বৈশিষ্ট্যেল মধ্যে- 
    ১. প্রমিত ভাষা একটি ভাষী অঞ্চলে সর্বজন ব্যবহার্য ভাষা। 
    ২. আনুষ্ঠানিক কাজে এ ভাষার সর্বাধিক গুরুত্ব বিদ্যমান। 
    ৩. শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে প্রমিত ভাষার প্রয়োগ দেখা যায়। 
    ৪. দেশের প্রতিনিধিত্বকারী ভাষা হিসেবে এটি স্বীকৃতি পেয়ে থাকে। 
    ৫. দেশের সব অঞ্চলের ভাষী ভাষার প্রমিত রূপটি বুঝতে পারে। 

    প্রমিত ভাষা ও আঞ্চলিক ভাষা বা উপভাষা:
    প্রমিত ভাষা হলো দেশের সব অঞ্চলের মানুষের যোগাযোদের জন্য বোধগম্য ভাষা। অন্যদিকে আঞ্চলিক ভাষা বা উপভাষা হলো একই ভাষার বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের মধ্যে যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত ভাষা। দেশে বইপুস্তক রচনা ও আনুষ্ঠানিক পরিবেশে মুখের ভাষা ও লেখার ভাষা হিসেবে প্রমিত ভাষা ব্যবহার করা হলেও আঞ্চলিক ভাষা কেবল নির্দিষ্ট অঞ্চলের মানুষের মুখের ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তবে মনে রাখতে হবে, মুখের ভাষাকে ভিত্তি করেই ভাষার প্রমিত রূপ গড়ে এঠ। 
    অঞ্চলভেদে ভাষার পার্থক্যকে এককথায় উপভাষা বলা হয়ে থাকে। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক প্রভৃতি কারণে কোনো একটি অঞ্চলের উপভাষা সমগ্র দেশের মানুষের ভাব আদান-প্রদানের বাহন রূপে চল হয়ে যায়। ভাষার এরূপ উচ্চারণকেই আদর্শ উচ্চারণ রূপে ধরা হয়। 
    পৃথিবীর প্রত্যেকটি দেশের ভাষাতেই নানা উপভাষাগত উচ্চারণ রয়েছে। তবু একটি বিশেষ অঞ্চলের উচ্চারণের দিক থেকে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সভ্যতার বাহন হয়েছে। ইংল্যান্ডে লন্ডনের ভাষা, জার্মানিতে বার্লিনের, ফ্রান্সে প্যারিসের, চীনে পিকিং-এর, ভারতের প্রাদেশিক ভাষাগুলোর মধ্যে তাদের রাজধানীকেন্দ্রিক ভাষাগুলোই প্রমিত ভাষা রূপে ব্যবহৃত হয়েছে। 
    শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে যে ইংরেজি সর্বত্র ব্যবহৃত হয়, ইংরেজরা সেই ইংরেজি ভাষাকেই প্রমিত বা মান ভাষা হিসেবে গ্রহণ করেছে। ইংল্যান্ড এ ইংরেজিকে বলা হয় মান ইংরেজি বা standard English আর এর উচ্চারণ হলো গৃহিত উচ্চারণ বা Received pronunciation সংক্ষেপে RP । 

    প্রমিত ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্র:
    সারা দেশের মানুষ যাতে বুঝতে পারে সেজন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রমিত ভাষার ব্যবহার হয়। প্রমিত ভাষার ক্ষেত্রগুলো হলো- 
    ক. পাঠ্যবই রচনা
    খ. বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা অফিস আদালতে
    গ. অনুষ্ঠান সঞ্চালনা
    ঘ. সংবাদ পাঠ
    ঙ. হারানো বিজ্ঞপ্তি
    চ. যেকোনো ধরনের ঘোষণা
    ছ. খেলার মাঠের ধারাবিবরণী
    জ. শ্রেণিকক্ষে পাঠদান
    ঝ. কোনো বিষয়ে বক্তৃতা
    ঞ. আনুষ্ঠানিক পরিবেশে কথা বলা

প্রমিত বাংলা ব্যবহারের তিনটি ক্ষেত্র নির্দেশ করা যায়- 

    ক. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মূলত উচ্চাশিক্ষা ক্ষেত্র
    খ. অফিস-আদালত
    গ. আইন-আদালত

প্রমিত ভাষা ও উচ্চারণ:
প্রমিত ভাষার কথা বলার জন্য দুটি জিনিস গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো হলো ধ্বনির উচ্চারণ ও শব্দের উচ্চারণ। আমরা যখন কথা বলি তখন বিভিন্ন অর্থবোধক ধ্বনিসমষ্টি উচ্চারণ করি। বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত ধ্বনিগুলোর উচ্চারণ স্থান ও উচ্চারণ রীতি সঠিকভাবে আয়ত্ত করতে পারলে বাংলা ভাষার প্রমিত উচ্চারণ সহজ হয়। বাংলা ভাষায় ধ্বনি উচ্চারণের তারতম্য দেখা যায় মূলত অল্পপ্রাণ-মহাপ্রাণ, ঘোষ-অঘোষ, তালব্য ও তালব্য দন্তমূলীয় ধ্বনির ক্ষেত্রে।

    প্রমিত ভাষা ব্যবহারের সীমাবদ্ধতা
    ১. প্রমিত ভাষা সম্পর্কে জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা।
    ২. সৃজনশীল রচনায় প্রমিত ভাষা ব্যবহারের সীমাবদ্ধতা। 
    ৩. প্রমিত বাংলা ব্যবহারের ঔদাসীন্য। 
    ৪. তথ্য প্রযুক্তিতে প্রমিত বাংলা ব্যবহারের জটিলতা।
    ৫. শুদ্ধ উচ্চারণের সীমাবদ্ধতা। 

No comments

Theme images by Maliketh. Powered by Blogger.