ব্যক্তি ভাষা কাকে বলে? ব্যক্তিভাষা বলতে কি বোঝ? What is Idiolect?
ব্যক্তিভাষা
ব্যক্তির নিজস্ব পরিচয় যে ভাষারূপের মাধ্যমে প্রকাশ পায়, তাকে ব্যক্তিভাষা বলে। কোনো ব্যক্তি একই সমাজে বাস করলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যায়, ব্যক্তির ভাষা ব্যবহারে স্বাতন্ত্র রয়েছে। ব্যক্তিভেদে ভাষা ব্যবহারের স্বাতন্ত্র্যকে বলা হয় ব্যক্তি ভাষা(Idiolect)। অর্থাৎ, ব্যক্তিভাষা হলো একজন ব্যক্তির নিজস্ব ভাষা, যা তার স্বাতন্ত্র্যকে প্রকাশ করে। প্রত্যেক ব্যক্তির উচ্চারণ, শব্দচয়ন, বাক্য গঠন, এবং ভাষা ব্যবহারের ধরণ একটু একটু করে ভিন্ন হয়ে থাকে। এই ভিন্নতাকেই ব্যক্তিভাষা বলে। এই ব্যক্তি ভাষার পার্থক্য নিরূপণ করা যায়- ব্যক্তির শব্দভাণ্ডার, ব্যাকরণ, এবং উচ্চারণের ভিত্তিতে। এটি একটি ভাষার মধ্যে একটি অনন্য উপভাষার মতো হলেও এটি উপভাষা থেকে পৃথক হয়। ভাষার ব্যবহার ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়ে যায়। ব্যক্তিভাষা গঠনের ক্ষেত্রে ব্যক্তির শারীরিক গঠন, শিক্ষা, উপভাষিক প্রভাব, ভাষা ব্যবহারের অধিক মনোযোগ প্রভৃতি ক্রিয়াশীল থাকে। অর্থাৎ ভাষা ব্যবহারে ব্যক্তি যখন কোন সমস্যা অনুভব করে অথবা অন্যদের ভাষা থেকে তার ভাষা পৃথক হয়ে যায়, তখন তার মধ্যে ভাষাতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যা সাধারণের ভাষা থেকে পৃথক। এরূপ ভাষার ক্ষেত্রে ব্যক্তির আচার-আচরণ, মনোভাব, সংস্কৃতি ভূমিকা পালন করে থাকে।
আসলে, আমরা প্রত্যেকেই প্রতিদিন ব্যক্তিভাষা ব্যবহার করি, হয়তো জানি না। এটি এমন একটি ভাষা যা শুধু আমাদের মুখে বেরিয়ে আসা শব্দ নয়, বরং আমাদের চিন্তাভাবনা, অনুভূতি, এবং ব্যক্তিত্বের প্রতিফলন। প্রত্যেক ব্যক্তিরই ভাষা বলার নিজস্ব ধরন, শব্দচয়ন, এবং উচ্চারণ রয়েছে। এই ব্যক্তিগত শৈলীই হল ব্যক্তিভাষা। আমরা যে পরিবারে বড় হই, যে সমাজে বাস করি, সেইসবের প্রভাব আমাদের ব্যক্তিভাষার উপর পড়ে। আমাদের জীবনের অভিজ্ঞতা, জ্ঞান, এবং আগ্রহের ক্ষেত্রও আমাদের ব্যক্তিভাষাকে গড়ে তোলে। ব্যক্তিভাষার উৎস ব্যক্তির জীবন, পরিবার, পরিবেশ, শিক্ষা, সামাজিক অবস্থা প্রভৃতি হলেও ব্যক্তিভাষা উৎস থেকেও স্বতন্ত্র।
No comments